যদি প্রশ্ন করি গাওয়া ঘি কি? এর সহজ উত্তর হল: গাওয়া ঘি হলো দুধ ঘন করে চুলায় জ্বালিয়ে দুধের সর থেকে তৈরিকৃত বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদানের নাম। দুধ যেহেতু আমাদের বয়স-ভেদে সকলের পছন্দ-কৃত একটি আইটেম তাই দুধের তৈরি একটি খাবার আইটেম হিসেবে আমাদের পছন্দের তালিকায় ঘি চাহিদা সবসময় শীর্ষস্থানে অবস্থান করে। কেউ ঘি ভাতের সাথে খেতে পছন্দ করে, কেউবা কোন খাবার প্রস্তুতিতে ঘি ব্যবহার করে। পুষ্টি-গুণসম্পন্ন খাঁটি গাওয়া ঘি কাকে বলে এই নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের আলোচনায়।
গাওয়া ঘি কাকে বলে
বেশ পছন্দের এবং পুষ্টিকর একটি আইটেম হিসেবে ঘি আমাদের সকলের কাছে বেশ পরিচিত। ক্রমবর্ধমান জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, বেশিরভাগ কোম্পানিসমূহ বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ঘি। কিন্তু স্বাদের দিক ছাড়াও,যদি মানের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘি এর মধ্যে রয়েছে ভেজালের ছড়াছড়ি।এই সকল ঘি তে পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। তাই পরিমিত পরিমাণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঘি যদি খেতে চান সেক্ষেত্রে গাওয়া ঘি থাকা উচিত আপনার পছন্দের তালিকায়।
গাওয়া ঘি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও ঘি যে আমাদের জন্য পুষ্টি-গুণসম্পন্ন সম্পন্ন একটি খাবার তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তাই ঘি এর পরিপূর্ণ এবং সঠিক পুষ্টিগুণ পেতে হলে, আমাদের উচিত আসল গাওয়া ঘি খাদ্য উপাদান হিসেবে যাচাই করে নেওয়া। কিন্তু খাঁটি গাওয়া ঘি এর নাম শুনলেই অনেকেই এটিকে উঠি। গাওয়া ঘি হল সবচেয়ে পরিশুদ্ধ এবং পুরোপুরি ভেজালমুক্ত ঘি। সরাসরি গরুর দুধ থেকে তৈরীকৃত চুলায় জ্বালানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে হাতে প্রস্তুত করা হয় সেই ঘি।
খাঁটি গাওয়া ঘি নিয়ে যত কথা
ঘি এমন একটি খাবার যা অনেকের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় একটি বিশাল অংশ জুড়ে অবস্থান করে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের খাবারে ঘি না হলেও চলেই না। তাই ঘি এর পরিপূর্ণ এবং সঠিক পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে আমাদের আসল খাঁটি ঘি বেছে নেওয়াই উচিত।
কিন্তু, বাজারে নিত্যনৈমিত্তিক ভেজাল ঘি কে আসল ঘি বলে চালিয়ে দেওয়ার কারণের আমরা আসল ভেজালমুক্ত ঘি সংগ্রহ করা থেকে খানিকটা বঞ্চিত হচ্ছি। তাই আপনি যদি ঘি এর পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিগুণ পেতে চান তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন খাঁটি গাওয়া ঘি।
সরাসরি গরুর খাঁটি দুধ থেকে তৈরিকৃত গাওয়া ঘি আপনার এবং আপনার পরিবারের সঠিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। কারণ আপনি গাওয়া ঘি এর মধ্যে একই সাথে পেয়ে যাবেন ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ এবং বি ১২। যেহেতু গাওয়া ঘিতে পেয়ে যাচ্ছেন ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি এর সংমিশ্রন।
যেটা যেকোনো চর্বি-বিহীন খাবারে যদি মিশে যায় তাহলে সে খাবার আপনার শরীরকে সুস্থ এবং কর্মচঞ্চল রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরে সুস্থতার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করবে।
গাওয়া ঘি এর উপকারিতা কত জানেন কি?
পুষ্টিকর এবং শক্তিবর্ধক খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে গাওয়া ঘি সকলের পছন্দের তালিকায় নিজের স্থান দখল করে নিয়েছে। তবে আপনি জানেন কি খাদ্য উপাদান হবার পাশাপাশি গাওয়া ঘি এর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে আমরা অনেকে বেশি স্বাস্থ্যসচেতন। তাই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে আমরা অনেকেই ঘি খেতে চাই না। কিন্তু আপনি জানেন কি ঘি এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি এসিড যা আমাদের শরীরের মধ্যে জমতে থাকা কোলেস্টোরেলকে বার্ণ করতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ঘি এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভিটামিন যেমন-ভিটামিন ডি,ই এবং এ। এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলো আমাদের চোখ, চুল এবং ত্বকের সুস্থতার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ঘি এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আর্থাইটিস এর সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। ঘি এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়াম চেইন এসিড যা আমাদের শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করতে বেশ সাহায্য করে। যাদের কোষ্টকাঠিন্যের মত সমস্যা রয়েছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী ঘি খাওয়ার ফলে শরীরের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
খাঁটি গাওয়া ঘি
একটি উৎকৃষ্ট এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হিসেবে আমাদের পছন্দের তালিকায় অবস্থান করে ঘি। কিন্তু আপনি জানেন কি বাজারে যে সকল ঘি রয়েছে সেই ঘি সমূহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নকল এবং ভেজালে পরিপূর্ণ। তাই আপনি যদি বাজারের নকল এবং ভেজালের ভিড়ে আসল ঘি খেতে চান তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন গাওয়া ঘি।
কিভাবে বুঝবেন কোন ঘি খাঁটি কি না?
খাঁটি ঘি চেনা বেশ সহজ। খাঁটি ঘি চেনার উপায় অনেক থাকলেও আজ একটি উপায় তুলে ধরছি আপনাদের কাছে। প্রথমে একটি পাত্রে আপনার ব্যবহৃত ঘি নিয়ে নিন।
সেই ঘি ওয়ালা পাত্রে সামান্য তাপ দিন। তাপের প্রভাবে যদি সাথে সাথেই ঘি গলতে শুরু করে এবং সেই ঘি হালকা সোনালী কিংবা বাদামি ঘি চেনার উপায় হচ্ছে ঘি যখন জমা অবস্থায় থাকে তখন হলুদ বা সোনালী থাকে কিন্তু চুলার তাপে গেলে সাথে সাথে লক্ষ্য করতে হবে গলতে কি পরিমাণ সময় নিয়েছে। যদি ঘি গলতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে বেং গলার পর তেল এর মোট বর্ণ ধারণ করে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ঘি নকল।
কিন্তু আপনি যদি এক্ষেত্রে গাওয়া ঘি ব্যবহার করেন তাহলে গলতে যেমন সময় নিবে না ঠিক সেই সাথে রঙের কোন ধরণের পরিবর্তন হবে না। পাশাপাশি আপনার ঘি ব্যবহারের কারণে খাবারের বেশ ভিন্নতার ছোঁয়া লাগবে আর সুগ্রান দেখতে বুঝে যাবেন সে আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন সে ঘি কতটা খাঁটি।
হোম মেইড খাঁটি গাওয়া ঘি
বর্তমানে বাজারে চলছে নকলের ছড়াছড়ি। নকলের এই ভিড়ে আসল গাওয়া ঘি যদি আপনি পেতে চান তাহলে আপনি খুব সহজে বাড়িতে বসে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত খাঁটি গাওয়া ঘি। তাই আপনি যদি হোম মেইড খাঁটি গাওয়া ঘি তৈরি করতে চান তাহলে অল্প কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজে বাড়িতে বসে তৈরি করতে পারবেন আপনার পছন্দের গাওয়া ঘি।
হোম মেইড খাঁটি গাওয়া ঘি তৈরি করতে চাইলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরী করতে পারেন:
আপনি যদি খাঁটি হোম মেইড খাওয়া ঘি প্রস্তুত করতে চান তাহলে আপনাকে প্রয়োজন মতো গরুর দুধ সংগ্রহ করে নিতে হবে।
- প্রথমে প্রয়োজন অনুযায়ী গরুর দুধ একটি পাত্রে নিয়ে সেটি জ্বালিয়ে সর করে নিন।
- সর জমে গেলে তুলে রাখতে হবে । বেশ কয়েকবার এমন করে দুধ জ্বালিয়ে সর তুলে রাখতে হবে ।
- একটি পাত্রে দুধের সর নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে নেড়ে ঘন করে নিন।
- এইবার ঘি জ্বালাতে থাকুন এবং নিয়মিত নাড়তে থাকুন ।
- জাল দিতে দিতে তেল যখন হালকা বাদামি রং হয়ে আসবে তখন বোতলে তা সংরক্ষণ করে নিন।
- এ ভাবে একদম-হোম মেইড খাঁটি গাওয়া ঘি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা গাওয়া ঘি এর সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন। সেই সাথে আজকের আলোচনায় আসল ঘি চেনার উপায়সমূহ জানতে পেরেছেন। তাই সবসময় গাওয়া ঘি খাবেন এবং নিজের এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবেন।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আপনার পরিচিত কাউকে জানানোর প্রয়োজন হলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না ।