ঘি আমাদের ছোট বড় সকলের বেশ পছন্দের একটি খাবার এবং সকলের কাছেই পরিচিত। তাই আমাদের জানতে হবে আসল খাঁটি ঘি চেনার উপায় কি ? প্রায় প্রত্যেক বয়সের মানুষের খাদ্য তালিকার পছন্দের খাদ্য উপাদান হিসেবে অনায়াসে স্থান করে নেয় ঘি। খাবারের স্বাদ বাড়াতে, কোন খাবার তৈরি করতে আমরা ঘি ব্যবহার করে থাকি । কিংবা শক্তিবর্ধক উপাদান হিসেবে আমার সকলে ঘি খেয়ে থাকি।
ঘি এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বর্তমানে ঘি নিয়ে হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে খাঁটি ঘি পাওয়া গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে বসেছে নকল ঘি এর পসরা। তাই আসল ঘি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে সূম্পর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।
ঘি একটি উৎকৃষ্ট এবং পুষ্টিকর খাবার। তাই আমাদের প্রাত্যহিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আমাদের সকলের খাদ্যতালিকায় ঘি প্রাধান্য দেয়া উচিত। আজকাল সকলের পছন্দের কথা বিবেচনা করা অনেক কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট আইটেম হিসেবে বাজারে এনেছে ঘি।
একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা অনেকে বাসায় নিয়ে আসি সেই ঘি। কিন্তু আমরা কি কখনো যাচাই করি আমরা যে ঘি বাজার থেকে নিয়ে আসছি সে ঘি কতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ বা খাঁটি । তাই চলুন জেনে নেই সঠিক উপায়ে ঘি নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে:
খাঁটি ঘি চেনার উপায় কি এবং ঘি নির্বাচন পদ্ধতি
আসল কিংবা নকল ঘি চেনার জন্য রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি। চলুন জেনে নেই ঘি নির্বাচনের পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে –
হাতের তালুতে নিয়ে খাঁটি ঘি শনাক্তকরণ
আপনি যদি ঘি শনাক্তকরণের প্রাথমিক ভাবে কোন একটি উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে-অবলম্বন করতে পারেন এই পদ্ধতি। প্রথমে এক চামচ ঘি আপনার হাতের তালুতে রাখুন। আপনার শরীরের উষ্ণতায় যদি ঘি গলে যায় তাহলে বুঝে নিতে পারেন যে আপনার ব্যবহৃত ঘি খাঁটি।
ল্যাবে টেস্ট করার মাধ্যমে ভেজাল ঘি চেনার উপায়
ঘি শনাক্তকরণের আরেকটি পদ্ধতির নাম হল ল্যাব টেস্ট। ল্যাবে ঘি টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজে আপনি আসল কিংবা নকল ঘি শনাক্ত করতে পারবেন। দেশের যে কোনো অনুমোদিত সরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করতে পারেন । অথবা BSTI থেকে টেস্ট করতে পারেন ।
চুলায় গরম করে ঘি শনাক্তকরণ পদ্ধতি
আপনি যদি খাঁটি ঘি শনাক্ত করতে চান তাহলে চুলায় শনাক্ত করতে পারেন। প্রথমে একটি কড়াইয়ে আপনি ঘি নিয়ে চুলার উপর বসিয়ে নিন। চুলায় বসানো পর যদি দেখেন ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে তখন বুঝে নিতে হবে আপনাকে নকল ঘি দেওয়া হয়েছে।
কোলটার ডাই শনাক্তকরনের মাদ্ধমে খাঁটি ঘি চেনার উপায়
ঘি শনাক্তকরণের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি উপায় হল কোলটার ডাই শনাক্তকরণ পদ্ধতি। এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে আপনার ব্যবহৃত ১ চামচ ঘি নিয়ে ৫ মিঃলিঃ হাইড্রোক্লোরিক এসিড যুক্ত করতে হবে। ভালোভাবে মেশানোর কিছুক্ষণ পর যদি মিশ্রণটির রং লাল হয়ে যায় তাহলে আপনি বুঝতে হবে যে, আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন যে ঘি খাঁটি নয়। এটি তৈরির ক্ষেত্রে কোলটার ডাই ব্যবহার করা হয়েছে।
সিদ্ধ আলু ব্যবহার করে শনাক্তকরণ
ঘি এর মধ্যে আলু সিদ্ধ ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটা যদি শনাক্ত করতে চান তার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিতে হবে। সেই ঘি এর সাথে আপনি সামান্য পরিমাণ আয়োডিন মেশাতে হবে। কিছুক্ষনের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখবেন যদি ঘি এর মিশ্রণের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হয় তাহলে বুঝে নিবেন যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে সিদ্ধ আলু ব্যবহার করা হয়েছে।
ঘি থেকে ডালডা শনাক্তকরনের মাদ্ধমে ভেজাল ঘি চেনার উপায়
প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিয়ে তার মধ্যে আপনাকে যুক্ত করতে হবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড। যদি কিছুক্ষন পর দেখন যে, ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে তা বেশ লালচে কিংবা বাদামি লালচে রং ধারণ করেছে তাহলে বুঝতে হবে যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে ডালডা ব্যবহার করা হয়েছে।
তিলের তেল ব্যবহার করে খাঁটি ঘি চেনার উপায়
ঘি থেকে তিলের তেল শনাক্তকরণের জন্য প্রথমে আপনি একটি পাত্রে অল্পকিছু ঘি নিয়ে নিন । ঘি এর সাথে আপনি পরিমাণ অনুযায়ী ফারফিউরাল এসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। যদি আপনার মিশ্রণটিতে রং পরিবর্তন হয় এবং তা লালচে রং ধারণ করে তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন সে ঘি তৈরি করার জন্য তিলের তেল ব্যবহার করা হয়েছে।
খাঁটি গাওয়া ঘি নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
ঘি নিয়ে আমাদের আগ্রহ,কৌতূহল কিংবা জিজ্ঞাসার শেষ নেই। তাই তেমনি কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা উত্তর জেনে নেওয়া যাক-
খাঁটি গাওয়া ঘি এর দাম কত?
খাঁটি ঘি এর দাম কত? এই প্রশ্ন টা আজকাল আমাদের কাছে কমন হয়ে গেছে । এলাকা ভেদে এবং বিভিন্ন কারণে ঘি এর দামের কিছুটা পার্থক্য হতে পারে। আপনি যদি খাঁটি ঘি কিনতে চান সেক্ষেত্রে আপনার ১ কেজি ঘি এর দাম পড়বে প্রায় ১২০০- ১৫০০ টাকা। এবং সরের ঘি ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি হতে পারে । এই পোস্ট থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের ঘি এর দাম জানুন |
খাঁটি ঘি কোথায় পাবো?
বর্তমান সময়ের আমরা বেশ স্বাস্থ্য-সচেতন। তাই ঘি কেনার ক্ষেত্রেও আসল নকল দেখে কিনবো । আপনার পরিচিত কোনো ব্যাক্তি বা পরিচিত কোনো অনলাইন পেজ থেকে খাঁটি ঘি নিতে পারেন । এখানে বড় বড় ব্র্যান্ড গুলি এড়িয়ে চলাই উত্তম ।
কোন ব্রান্ডের ঘি ভালো?
এটা অনেক কঠিন একটা প্রশ্ন । নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভবনা তবে বিসমিল্লাহ ঘি ব্র্যান্ড এর ঘি নিলে আশা করা যায় আপনারা খাঁটি ঘি টাই পাবেন ।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি?
ঘি এমন একটি খাবার যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের অনেক উপকার করে । খাঁটি ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে বললে অনেক কথাই বলা যায় তবে এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো :
– চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
– মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
– শরীরে হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে।
– হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
– ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে।
– স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি আরও জানতে চাইলে এই পোস্ট পড়তে পারেন । পড়তে চাই
ঘি খাওয়ার অপকারিতা কি?
প্রতি জিনিসেরই ভালো মন্দ ২ টা দিকই থাকে । অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় । ঘি এর বেলাতেও এটি ব্যতিক্রম নয় । উপকারিতার পাশাপাশি বেশি ঘি খাওয়ার কারণে বেশ কিছু ঘি এর অপকারিতা রয়েছে যেমন –
– অতিরিক্ত ঘি খেলে আমাদের হজমে সমস্যা হতে পারে।
– অতিরিক্ত ঘি গ্যাস্ট্রিকের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
– অতিরিক্ত ঘি খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা জন্ম দিতে পারে।
আমাদের সকলের পছন্দ এর একটি খাদ্য হল ঘি। উপকারী একটি খাবার হলেও কখনো প্ৰয়োজনের বেশি ঘি খাওয়া উচিত নয়, ঘি এর ব্যবহার ঠিক মত না করলে তখন হিতে-বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পরিশেষে বলা যায়, খাঁটি ঘি কীভাবে বোঝা সম্ভব? আশা করি এই পোস্টটি পরে এতক্ষনে আপনি জেনে গিয়েছেন । এখন থেকে ঘি কিনতে হলে ওপরে আলোচনা করা পদ্ধতি গুলি আপনি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন । তাহলে আপনি নিজেই আসল খাঁটি ঘি এবং ভেজাল ঘি এর পার্থক্য বুজতে পারবেন । আশা করা যায় ভবিষ্যৎতে আপনি আর ঘি কিনে ঠকবেন না ।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আপনার পরিচিত কাউকে জানানোর প্রয়োজন হলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না ।